দেশীয় অস্ত্র হাতে জাবি ছাত্রলীগের মহড়া, ২ সাংবাদিক লাঞ্ছিত
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৫:০০ অপরাহ্ন | শিক্ষা
মাহমুদুল হাসান (জাবি প্রতিনিধি):
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) তুচ্ছ ঘটনায় ঘটে যাওয়া মারামারিকে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের মীর মশাররফ হোসেন হলের নেতাকর্মীরা। মহড়া চলাকালীন সময়ে খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া দুই সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বুধবার (২২ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার ভাসানী চত্বরে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের কিছু শিক্ষার্থী মারধর করে। এই মারধরের প্রতিশোধ নিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশে একদল শিক্ষার্থী রামদা, লোহার পাইপ, লাঠিসোটা ও কাঁচের বোতল নিয়ে হল থেকে মহড়া দিয়ে বটতলার ভাসানী চত্বরে আসে।
এসময় শাখা ছাত্রলীগের এমএইচ হলের কয়েকজন পদধারী নেতার উপস্থিতিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ‘বাংলাদেশ টুডে’র ক্যাম্পাস প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ ও ‘ডিবিসি নিউজ’-এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুনের উপর চড়াও হয়ে মারধরের চেষ্টা করেন হল ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী।
এসময় বিক্ষিপ্তভাবে হামলা করে জুবায়ের আহমেদের গায়ের জামা ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বটতলায় প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অবস্থান করছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাবি করেন, বুধবার সন্ধ্যায় বটতলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র আহমেদ গালিবকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একদল শিক্ষার্থী মারধর করেন। এর জের ধরেই তারা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের দিকে যাচ্ছিলেন।
এদিকে মহড়ার খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আগে থেকেই অবস্থান নেয় প্রক্টরিয়াল টিম। শিক্ষার্থীরা বটতলার ভাসানী চত্বরে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রক্টরিয়াল টিম তাদের বাধা প্রদান করে। সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী বাগবিতণ্ডা হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের শিক্ষার্থী ও প্রক্টরকে উদ্দেশ করে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় স্লোগান ও গালাগাল দিতে থাকে। পরে সাংবাদিককে হেনস্থার ঘটনার বিষয়ে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে হলের নেতাদের নির্দেশে বটতলা এলাকা ত্যাগ করে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা। এসময় বটতলার রাস্তাজুড়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা কাঁচের বোতল ভাঙচুর করতে করতে তারা হলে ফিরে যান।
এসময় ঘটনাস্থলে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ (পরিবেশ বিজ্ঞান-৪৪), সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান (ইতিহাস-৪৪), সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (মার্কেটিং-৪৪), সহ-সভাপতি সজীব হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বিপ্লব হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেলিন মাহবুব উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, তাদের নির্দেশেই মারধরের প্রতিশোধ নিতে হল থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়ায় বের হন শিক্ষার্থীরা। তাদের ইন্ধনেই অন্য নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের মারধরের চেষ্টা করেছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
লোহার রড হাতে কয়েকজন
প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার সময়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আহমেদ গালিবের হাতে রামদা, সহ-সম্পাদক মৃন্ময় দাস, ৪৮ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের রাইয়ানুজ্জামান আকিব, ৪৮ ব্যাচের গণিত বিভাগের ফয়সাল আমিন আলিফ আলফা, ৪৯ ব্যাচের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অনুপ সরকার দীপ, ৪৯ ব্যাচের রসায়ন বিভাগের মাহমুদুল হাসান শান্তসহ প্রায় ২০ জন নেতাকর্মীর হাতে লোহার পাইপ ও কাঁচের বোতল দেখা যায়।
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘আমরা সাংবাদিককে হামলার ঘটনার সম্পর্কে জানতাম না। জানলে আসতামও না। এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। তাই ঘটনাস্থলে আসতে দেরি হয়েছে। ছাত্রলীগের কেউ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে দেশীয় অস্ত্র থাকলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায়তো একরকম শঙ্কা তৈরি হয়। আমরা এসবের বিরুদ্ধে রয়েছি। এক্ষেত্রে হল থেকে এসব নির্মূলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করবো।’
এদিকে সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক জুবায়ের আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে তিনি নিজের ওপর হামলার বর্ণনা দিয়ে তার বিচার দাবি করেন। অভিযোগপত্রে তিনি লেলিন মাহবুব, হাসান মাহমুদ ফরিদ, আবুল কালাম আজাদ ও আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান নামে চার জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আজকের ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। আমরা এই ধরনের ঘটনাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখে তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিই। এক্ষেত্রেও সেটিই করা হবে। এর বাইরে কোনও অভিযোগ পেলে সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে। শিক্ষার্থীরা কী করেছে, তোমরাও দেখেছো। তোমরা নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাও।’
এর আগে গত রবিবার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) ৪৭তম ব্যাচের ও রবীন্দ্রনাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানকে মারধর করা হয়।
এ ঘটনায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ গালিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভীর ইসলাম, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির হাসান সাগর ও খালিদ হাসানসহ অজ্ঞাত ৪০ জনের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। এছাড়া গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাতে মীর মশাররফ হোসেন হলের গেস্টরুমে এক শিক্ষার্থীকে চড় মেরে কান ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
#......
২৩-০৩-২০২৩

